Highlights
- ● এনসিবিআই (NCBI)-তে প্রকাশিত একটি স্টাডি (study) অনুযায়ী ডার্ক সার্কেল পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়। ১৬-২৫ বছর বয়সের ৪৭.৫০% মানুষের ডার্ক সার্কেল স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়।
- ● ডার্ক সার্কেলের একটি প্রধান কারণ হল জেনেটিক্স (genetics)।
- ● চিকিৎসা না হলে ডার্ক সার্কেল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
- ● খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে চিকিৎসা করলে ডার্ক সার্কেল কমে যেতে পারে।
ডার্ক সার্কেল কি?
ডার্ক সার্কেল অর্থে চোখের তলার বা আশেপাশের ত্বক কালো বা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া। এই ত্বক নীলচে, কালো বা গাঢ় বাদামী রঙের হয়ে যেতে পারে। ত্বকের এই পরিবর্তনকে চোখের পাশের হাইপারপিগমেন্টেশন (periorbital hyperpigmentation), মেলানোসিস (periorbital melanosis), চোখের নিচে কালি পড়া বা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া (infraorbital darkening/discoloration) বা চোখের কোলের ডার্ক সার্কেল (periorbital dark circle) ও বলা হয়।
এর কারণগুলি কি?
ডার্ক সার্কেল মূলতঃ দুই ধরণের কারণের সমষ্টিতে তৈরি হয়। সেগুলি হল:
১. অভ্যন্তরীণ কারণ:
● বংশগত (hereditary/constitutional) – মেলানিন (melanin) কতখানি তৈরি হবে ও শরীরে কিভাবে ছড়াবে এটি ঠিক করে মানুষের জিন (genes)। এর প্রভাব চোখের পাশের কালো দাগেও পড়ে।
● পুষ্টির অভাব – লোহা (iron) ও ভিটামিন কে(vitamin K)-র অভাবে চোখের কোলের ত্বক বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।
● চোখের চারপাশ ফুলে ওঠা (periorbital edema) – চোখের তলায় যখন তরল (fluid) জমা হয়, চোখ ফোলা লাগে। এই চোখ ফোলা, যা পরে প্রদাহ-পরবর্তী কালো দাগে (post-inflammatory hyperpigmentation) পরিণত হতে পারে, তার কারণ হল বিভিন্ন অ্যালার্জি, শরীরে নুন ও জল জমা, উচ্চ রক্তচাপ, কিছু অসুখ (যেমন লিভার, থাইরয়েড,কিডনির অসুখ) এবং সাইনাসে সংক্রমণ ইত্যাদি।
● রক্তশিরা প্রকট হয়ে ওঠা – উপরের ত্বক পাতলা হয়ে গেলে নিচ থেকে রক্তশিরাগুলি প্রকট হয়ে ওঠে, যার ফলে চোখের চারপাশ আরও কালো লাগে।
● বয়স বাড়া- বয়স বাড়লে ত্বকের কোলাজেন (collagen) ভেঙ্গে পড়ে যার ফলে কালো ছোপ, ত্বক ঝুলে পড়া, সূক্ষ্ম লাইন (fine lines) ও বলিরেখা দেখা দেয়। চোখের নিচের ত্বক পাতলা হয়ে গেলে রক্তশিরাগুলি স্পষ্ট হয়ে দেখা যায়, যাতে জায়গাটা কালো লাগে।
● টিয়ার ট্রাফ (tear trough) গর্ত- এটিও বয়সজনিত পরিবর্তন। চর্বি কমে যাওয়া, ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া ও গালের টিস্যু (tissue) নিচে নেমে আসার ফলে চোখের নীচে একটি গর্ত মত দেখা দেয়। এর ছায়া পড়লে ডার্ক সার্কেল হয়েছে বলে মনে হয়।
● অ্যাকান্থোসিস নাইগ্রিক্যান্স (acanthosis nigricans)- এটি একটি সমস্যা যাতে ত্বক মোটা হয়ে ভেলভেটের মত অনুভূতি হয় এবং কালো হয়ে যায়, যা চোখের চারপাশেও হতে পারে। এটি ইনসুলিন হরমোনের (insulin hormone) তারতম্য ও অন্যান্য মেটাবলিক (metabolic) রোগের সঙ্গে জড়িত।
● অন্যান্য কারণগুলি হল প্রদাহ-পরবর্তী কালো দাগ (post-inflammatory hyperpigmentation), ডার্মাল মেলানোসাইটোসিস (dermal melanocytosis) এবং পিগমেন্টারি ডিমারকেশন রেখা (pigmentary demarcation lines)।
২.বাহ্যিক কারণ
● ক্লান্তি ও স্ট্রেস (stress)- ঠিকভাবে ঘুম না হওয়া, পারিপার্শ্বিক ও মানসিক চাপ চোখের পাশের মাংসপেশীতে ধকল ফেলে, যার জন্য চোখের চারপাশে কালো দাগ হতে পারে। ডার্ক সার্কেল ক্লান্তির নিশ্চিত চিহ্ন না হলেও দুটির মধ্যে যথেষ্ট সংযোগ আছে।
● সূর্যালোক- ত্বকে রোদ লাগলে মেলানিন তৈরি বেড়ে যায়, তাতেও চোখের কোলে কালো দাগ হতে পারে।
● ওষুধ- হরমোনের ওষুধ এবং চোখের প্রেসার কমানোর ওষুধ (ocular hypotensive drops)(যেগুলি গ্লকোমায় ব্যবহৃত হয়) ডার্ক সার্কেলের কারণ হতে পারে।
● মদ্যপান/ধূমপান- অত্যধিক ধূমপান ও মদ্যপানের ফলে চোখের কোলে কালি পড়তে পারে। বিশেষতঃ ধূমপান ত্বকের মাইক্রোসার্কুলেশনের (microcirculation) ক্ষতি করে ডার্ক সার্কেল তৈরি করতে পারে।
চোখের কোলের কালোভাব কিভাবে চিহ্নিত করা হয় (diagnosis)?
চোখের কোলের কালোভাব চিহ্নিত করতে অনেকগুলি কারণ খুঁজতে হয়। খুঁটিয়ে মেডিক্যাল (medical) ও বংশগত হিস্ট্রি (history) নেওয়া হয়, তার সাথে জীবনশৈলী, খাদ্যাভ্যাস, পারিপার্শ্বিক চাপ সব কিছুই বিবেচনা করা হয়। এরপর ত্বককে ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়। সব করার পর একটি কারণ চিহ্নিত করা হয় ও চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কার ঝুঁকি আছে?
ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ ডার্মাটোলজি (Indian Journal of Dermatology)-তে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রের মতে “…চোখের কোলে কালো দাগ হওয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হল কনস্টিট্যুশনাল (constitutional)(৫১.৫০%), তারপর প্রদাহ-পরবর্তী (২২.৫০%)। বিভিন্ন ভুল অভ্যাস দেখা গেছে যেমন ঘুম কম হওয়া (৪০%), কসমেটিক্স (cosmetics) অত্যধিক ব্যবহার করা (৩৬.৫০%), ঘনঘন চোখ রগড়ানো (৩২.৫০%) এবং চোখের দোষ যেমন মায়োপিয়ার (myopia) চিকিৎসা না করানো (১২%)। চোখের কোলের কালো দাগের সঙ্গে স্ট্রেস (৭১%), অ্যাটপিক (atopic)(৩৩%) ও পরিবারে অন্য কারুর এই সমস্যা থাকার (৬৩%) সংযোগ দেখা গেছে।”
এর চিকিৎসা কি জরুরি?
ডার্ক সার্কেল থাকলে মানুষকে ক্লান্ত ও বয়স্ক দেখায়। প্রথমদিকে চিকিৎসা করালে দেরিতে চিকিৎসার চেয়ে বেশি ভালো ফল হয়। এর জন্য ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিত যাতে কোনো সুপ্ত সমস্যা থাকলে তা ধরা পড়ে।
চোখের তলায় ডার্ক সার্কেল আসা প্রতিরোধ করব কি করে?
● যথেষ্ট পরিমাণে ঘুম হলে মুখের মাংসপেশীগুলি বিশ্রাম পায়, যার ফলে গোটা দেহ উজ্জীবিত হয়। ঘুমের চক্র দেহকে নিজেকে সারিয়ে তোলার সময় দেয়।
● বেশি পরিমাণে জল পান করলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে। এটি একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার (moisturiser) হিসেবে কাজ করে ও ঘামের মাধ্যমে শরীরকে পরিষ্কার করে।
● সুস্থ ত্বক ও চুলের পিছনে খাদ্যাভ্যাসের একটি বড় ভূমিকা আছে। প্রসেসড (processed) খাবার কম খাওয়া বা এড়িয়ে চলা উচিত।
● নিয়মিতভাবে চোখের চারপাশে সানস্ক্রিন (sunscreen) ও ময়েশ্চারাইজার লাগালে ত্বক সুরক্ষিত থাকে।
● ঘনঘন চোখ রগড়াবেন না।
ঘরোয়া সমাধানে কতটা সাহায্য হয়?
ডার্ক সার্কেলের বহু ঘরোয়া সমাধান ও উপদেশ খুঁজলেই চারপাশে পাওয়া যায়। তবে এই সমাধানগুলির পক্ষে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যে এরা ত্বকের এ ধরণের সমস্যায় আদৌ কাজ করে কিনা। এক্ষেত্রে এই ধরণের টোটকা নিয়ে পরীক্ষা করা থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। বিভিন্ন উপাদানগুলি থেকে কিছু অজানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসা বিকল্পগুলি
● লাগানোর (topical) ওষুধ যাতে রেটিনয়েড (retinoid) বা ত্বকের রং উজ্জ্বল করার দ্রব্য রয়েছে যেমন কোজিক অ্যাসিড (kojik acid), ভিটামিন সি, ইত্যাদি।
● ডার্ক সার্কেলের পিল (peel)
● উজ্জ্বলতার পিল (peel)
● কিউ-সুইচড য়াগ লেজার (Q-switched YAG laser), গভীর পিগমেন্টেশনের জন্য
● মাইক্রোনিডলিং রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (microneedling radiofrequency), চোখের তলার সূক্ষ্ম লাইনের জন্য
● বোটক্স (botox), চোখের বাইরের কোণের সূক্ষ্ম লাইনের জন্য
● টিয়ার ট্রাফের জন্য ফিলার (filler)
ডার্ক সার্কেলের অনেকগুলি কারণ হয়। একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ চিকিৎসা পরিকল্পনা ও তার সাথে জীবনশৈলীর পরিবর্তন অনুসরণ করা উচিত। একজন অভিজ্ঞ চর্মবিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করানো উচিত।