কপালের পাশ (Temple) থেকে চুল পড়ার চিকিৎসা কি?

    Speak To Our Expert

    Please enter your contact information.

    আপনার হেয়ারলাইন (hairline) আপনার মুখের রূপরেখা হিসাবে কাজ করে। যখন মাথার চুল পড়তে আরম্ভ করে, বিশেষতঃ বয়সজনিত চুল পড়া (male pattern baldness), তখন সামনের হেয়ারলাইন ধীরে ধীরে পিছাতে শুরু করে কপাল চওড়া হয়ে যায়। কপালের পাশের চুল পাতলা হতে আরম্ভ হলে অধিকাংশ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা বুঝতে পারেন ব্যাপারটি গুরুতর এবং কোনো কৌশলের দ্বারা একে ঢাকা দেওয়া সম্ভব না। এই অবস্থায় পৌঁছলে চিকিৎসাবিদ্যার সাহায্য প্রয়োজন।

    কপালের পাশ (Temple) থেকে চুল পড়া কি?

    অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া (androgenetic alopecia) বা বয়সজনিত চুল পড়ার একদম প্রাথমিক লক্ষণ হল কপালের পাশের চুল পাতলা হয়ে যাওয়া। সারা স্ক্যাল্প (scalp) থেকেই চুল উঠতে থাকে, এবং কপালের পাশে মনে হয় টাক পড়ে যাচ্ছে। কপালের একদিক বা দুদিকেই শুরু হতে পারে। এর সঙ্গে সাধারণতঃ হেয়ারলাইন পিছিয়ে যায়, বা উইডো পিক (widow’s peak –কপালের মাঝখানে ‘V’ আকৃতির হেয়ারলাইন) দেখা যায়। এটি মহিলাদের থেকে পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, এবং বয়সের সাথে এর প্রবণতা বেড়ে যায়। সময়ে চিকিৎসা না করালে এটি স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

    Read More: Non-Surgical Hair Loss Treatment

    কপালের পাশ থেকে চুল পড়ার কারণ কি হতে পারে?

    আপনার কপালের পাশ থেকে চুল পড়তে শুরু করলে আপনি সম্ভবতঃ বয়সজনিত চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন। এটা ছাড়া আরও কিছু কারণ থাকতে পারে।

    . মেল প্যাটার্ন বল্ডনেস /এমপিবি (Male Pattern Baldness /MPB):

    বয়সজনিত এই চুল পড়ার সমস্যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেশিয়া (Androgenetic Alopecia) ।এটি জেনেটিক (genetic) কারণে পুরুষদের কপালের পাশ থেকে চুল পড়া শুরু হয়। হেয়ার ফলিকলের (hair follicle) ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরোন (dihydrotestosterone/DHT) হরমোনের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতার ফলে এই রোগটি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৩০৫০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে ৫৮% এই রোগে ভোগেন। এটি কপালের পাশের চুলে প্রথম দেখা দেয়।

    ২. অন্যান্য কারণ – কপালের পাশ থেকে চুল পড়ার অন্য কারণগুলি হল:

     

    ) অ্যালোপেশিয়া এরিয়াটা (Alopecia Areata): এই রোগে হঠাৎ করে মাথার বিভিন্ন জায়গা চুল উঠে ফাঁকা হয়ে যেতে থাকে। কপালের পাশ থেকেও খাবলা করে চুল উঠে যেতে পারে।

     

    ) স্কারিং অ্যালোপেশিয়া (Scarring Alopecia): একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে প্রাইমারি সিকাট্রিশিয়াল অ্যালোপেশিয়া (primary cicatricial alopecia) এর মধ্যে পড়ে এক গুচ্ছ চুলের রোগ যেগুলিতে হেয়ার ফলিকল স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে গিয়ে তার জায়গায় দেখা দেয় ফাইব্রাস টিস্যু (fibrous tissue)

     

    ) স্ট্রেস (Stress): আমাদের দেহের উপর কোনো অতিরিক্ত স্ট্রেস পড়লে চুলের বৃদ্ধির পর্যায়ে বাধা পড়ে টেলোজেন (telogen) এবং টেলোজেন এফ্লুভিয়াম (telogen effluvium) দেখা দেয়। বৃদ্ধির পর্যায়ে থাকা চুলগুলি খুব শীঘ্রই বিশ্রামের পর্যায়ে চলে যায় এবং তাড়াতাড়ি ঝরে পড়ে। এর ফলে কপালের পাশের চুলও পাতলা হয়ে যায়। স্ট্রেসের জন্য কপালের পাশের চুল পড়ে যাওয়া মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, কারণ:

                   ১) প্রসব পরবর্তী (Post Partum) চুল পড়া: প্রসবের পর মহিলাদের পুরো মাথা জুড়ে চুল ঝরা শুরু হয়, যা

                        কপালের পাশে বেশি হতে পারে।


                   ২) ট্র্যাকশন অ্যালোপেশিয়া (Traction Alopecia): মহিলারা যখন চুল শক্ত করে টেনে ঝুঁটি বা খোঁপা

                        বাঁধেন, তখন হেয়ার ফলিকলের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। কপালের পাশের চুলে টান পড়ার ফলে

                       এখানকার চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে।

     

    কপালের পাশ থেকে চুল পড়ার লক্ষণ

    এই সমস্যায় নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি পাওয়া যেতে পারে:

    • চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
    • কপালের পাশের হেয়ারলাইন পিছিয়ে যাওয়া
    • কপালের পাশে চুলের ফাঁক দিয়ে মাথার ত্বক দেখা যাওয়া
    • চুলের ক্ষতি, দুর্বলতা সহজে ভেঙে যাওয়া 

    কপালের পাশের চুল পড়ে যাওয়ার কি কোনো চিকিৎসা করা হয়?

    হ্যাঁ, কপালের পাশে টাক পড়ার চিকিৎসা আছে, কিন্তু যত তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায় ততই ভাল। রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে হেয়ার ফলিকলগুলি সক্রিয় থাকার সম্ভাবনা বেশি। একবার ফাইব্রোসিস (fibrosis) হয়ে গেলে ননইনভেসিভ (non-invasive) চিকিৎসায় আর সাড়া পাওয়া যায়না।

    আপনার চুলের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আপনার কপালের পাশের চুল পড়ার কারণ ব্যাপকতা দেখে আপনাকে চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন। তিনি আপনাকে ওষুধ, মাথায় লাগানো জেল ফোম (topical gels and foams) আলাদাভাবে বা একসাথে ব্যবহার করার নির্দেশ দিতে পারেন। আপনার চর্মবিশেষজ্ঞ যখন আপনার চুল পড়ার সঠিক কারণ ব্যাপ্তি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করবেন, তখন তিনি আপনাকে প্লেটলেট রিচ প্লাজমা থেরাপিরও (platelet rich plasma therapy) পরামর্শ দিতে পারেনএটি বয়সজনিত চুল পড়ার কার্যকরী চিকিৎসা হিসেবে স্বীকৃত।

    কপালের পাশের চুল পড়ে যাওয়ার কি কি চিকিৎসা হয়?

    এই সমস্যার জন্য ডাক্তারের কাছে তাড়াতাড়ি যাওয়া প্রয়োজন কারণ এতে ঘরোয়া টোটকা তেমন কাজ করেনা। তাড়াতাড়ি রোগটিকে সনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে ফলাফল আরও ভাল হয়। আপনার চুলের বিশেষজ্ঞ আপনাকে নিম্নলিখিত বিকল্পগুলির মধ্যে বেছে নিতে বলতে পারেন

    ১. প্লেটলেট রিচ প্লাজমা /পিআরপি (Platelet-Rich Plasma / PRP) চিকিৎসা:

    পিআরপি একটি নিরাপদ নন সার্জিক্যাল চিকিৎসাপদ্ধতি যা কপালের পাশের চুল পড়ায় ভাল কাজ করে। এতে রোগীর রক্ত থেকে নেওয়া প্লেটলেট ব্যবহার করে নতুন চুল গজানোতে সাহায্য করা হয়। মহিলা পুরুষ উভয়ের জন্যই টাক পড়া প্রতিরোধে এটি কার্যকরী।

    Read More: ভারতে চুলের পিআরপি (PRP) চিকিৎসার খরচ ও সফলতার হার কী?

    ২. মিনক্সিডিল (Minoxidil):

    রোগেন (Rogaine) নামে জনপ্রিয়, এই ওষুধটি, চুল গজানোর চিকিৎসার জন্য এফডিএ (FDA) অনুমোদিত। মাথায় লাগানোর ফোম বা সল্যুশন (topical foam or solution) হিসেবে কপালের পাশের চুল পড়ায় ব্যবহার করা যায়। চর্মবিশেষজ্ঞরা প্রায়ই পিআরপির উপকারিতাগুলি বজায় রাখতে এই ওষুধটি ব্যবহারের নির্দেশ দেন।

    এই ভিডিওটি এখনই দেখুন:

    ৩. ফিনাস্টেরাইড (Finasteride):

    এটিও মাথায় লাগানোর ওষুধ হিসেবে চুল পড়ার জন্য এফডিএ অনুমোদিত। তবে ডাক্তাররা পুরুষ এবং মেনোপজ (menopause) হয়ে যাওয়া মহিলাদের বয়সজনিত চুল পড়ার সমস্যায় এটি ব্যবহার করেন।

    ৪. কপালের পাশের হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট (Hair Transplant):

    এটি প্রাথমিক পর্যায়ে করা উচিত না, কারণ পরবর্তী কালে বয়সজনিত চুল পড়ার ফলে চুল আবার পাতলা হয়ে যেতে পারে। অন্য চিকিৎসায় সাড়া না পেলে শেষ বিকল্প হিসেবে এই সার্জারি করা যেতে পারে।

    কপালের পাশ থেকে চুল পড়ার চিকিৎসার আগে ও পরের ফলাফল: 

    কপালের পাশের চুল পড়ার সমস্যার সমাধান আছে। এটি অন্য কোন রোগের লক্ষণমাত্র। তাড়াতাড়ি চর্মবিশেষজ্ঞ দেখিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা শুরু করতে পারলে সবচেয়ে ভাল ফল পাবেন। আরো বিশদ তথ্য জানতে, অলিভা ক্লিনিকে দেখা করুন!

    Was this article helpful?

    About The Author

    Dr. Debatri Datta

    Dr. Debatri Datta has completed her MBBS from West Bengal University of Health Sciences in 2015 and MD - Dermatology , Venereology & Leprosy from West Bengal University of Health Science in 2019.