ভারতে ত্বক সাদা করার চিকিৎসার খরচ কত?
সারা বিশ্বে বিভিন্ন রকম ত্বক সাদা করার চিকিৎসা সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার ফলে ত্বকের হারানো রং ও জেল্লা খুঁজে পাওয়া এখন খুবই সহজ। লেজার চিকিৎসা থেকে ব্লিচিং-ত্বকের রং হালকা করার অনেকরকম রাস্তা আছে। এই তথ্যপূর্ণ নির্দেশিকাটি পড়লে আপনি ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসা, আন্দাজি খরচ, পদ্ধতি এবং আরও অনেক কিছু জেনে নিতে পারবেন।
ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসার উদ্দেশ্য হচ্ছে ত্বকের অতিরিক্ত মেলানিন (melanin) দূর করে দেওয়া। যেহেতু আপনার ত্বকের কালো দাগ, রঙের অসামঞ্জস্য ইত্যাদির জন্য মেলানিনই দায়ী, তাই এর পরিমাণ কমলে ত্বকের রংও হালকা হয়ে যায়। ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসা করালে মেচেতা (melasma), রোদ থেকে হওয়া ক্ষতি (sun damage), ফ্রেকেলস (freckles) এবং অন্যান্য দাগও কমে যায়।
ত্বক সাদা করার চিকিৎসা নিয়ে কিছু তথ্য ও প্রচলিত ধারণা
অধিকাংশ মানুষ ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসা ও ত্বক সাদা করার চিকিৎসা বলতে একই জিনিস ভাবেন। বিশেষজ্ঞ ত্বক চিকিৎসকদের মতে ত্বক সাদা করার চিকিৎসা একটি প্রচলিত ধারণা মাত্র, কিন্তু সত্যি নয়। ত্বক সাদা করার চিকিৎসা, অর্থাৎ ক্ষতিকর রাসায়নিক দিয়ে ত্বক থেকে মেলানিন কমিয়ে দেওয়া নিরাপদ নয়, এবং এর জন্য দায়ী সামাজিক কুসংস্কার। চর্মবিশেষজ্ঞরা ত্বকের স্বাভাবিক রংকে আরও হালকা করার চেষ্টা করতে দৃঢ়ভাবে বারণ করেন।
ত্বক ফর্সা করার সেরা চিকিৎসা
ত্বক ফর্সা করার অনেকরকম চিকিৎসা করা যায়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার মুখ বা শরীরের অন্য অংশ ফর্সা করার জন্য আপনি একটি পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন। কিছু বহুব্যবহৃত ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসার কথা এখানে বলা হচ্ছে।
১. ত্বক সাদা করার জন্য কেমিক্যাল পিল:
এই প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক নির্যাস থেকে সংগৃহীত কিছু আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিডের সল্যুশন (alpha hydroxy acid containing solution) লাগিয়ে ত্বকের উপরের ক্ষতিগ্রস্ত স্তরটি, যেখানে মেলানিন জমে, সেটিকে সরিয়ে দেওয়া হয় যাতে নিচ থেকে সুস্থ নতুন ত্বক দেখা দেয়। কনসেনট্রেশনের (concentration) উপর নির্ভর করে কেমিক্যাল পিল তিন রকমের হতে পারে- হালকা, মধ্যম ও গভীর (light, medium and deep)। বিবর্ণ ত্বকের দাগ, ট্যান (tan), কালো ছোপ বা রঙের অসামঞ্জস্য কমানোর জন্য কেমিক্যাল পিল একটি মৃদু পদ্ধতি। এগুলি সাধারণতঃ মুখের ত্বক হালকা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
২. ত্বক সাদা করার লেজার চিকিৎসা
লেজার চিকিৎসায় ত্বকের উপর একটি কেন্দ্রীভূত আলোর রশ্মি ফেলা হয়। এই আলো উচ্চশক্তিসম্পন্ন হয়, এবং এটি ত্বকের অতিরিক্ত মেলানিনকে (melanin) ভেঙে দেয়; এই মেলানিনকে ত্বকের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা শক্তি সরিয়ে দেয়। এর ফলে সুস্থ, উজ্জ্বল ত্বক দেখা দেয়। এই নতুনভাবে তৈরি হওয়া ত্বক নিখুঁত হয়। এই প্রক্রিয়াকে লেজার পিল বা লেজেব্রেশন (lasabrasion)-ও বলা হয়। এই লেজার চিকিৎসা ত্বকের কালো দাগ, সানট্যান (suntan), নিষ্প্রভতা ইত্যাদি সমস্যায় কার্যকরী। লেজার মুখ এবং শরীরের অন্য কিছু অংশের ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
এই ভিডিওটি দেখুন!
৩. ত্বক ফর্সা করার ইনজেকশন
ত্বক ফর্সা করার ইনজেকশনে উপাদান হিসেবে থাকে গ্লুটাথায়োন (glutathione), একটি ত্বকের রঙ হালকা করার দ্রব্য। এটি টাইরোসিনেজ (tyrosinase) নামের একটি এনজাইম (enzyme) তৈরিতে বাধা দেয়; এই এনজাইমটি শরীরে মেলানিন সৃষ্টিতে সাহায্য করে। একটি জনপ্রিয় মতামত হলো এই ইনজেকশন শরীরকে ডিটক্সিফাই (detoxify) করতে পারে, ত্বককে ক্ষতিকর ইউভি (UV) আলো থেকে বাঁচাতে পারে এবং ত্বক ফর্সা করে দেয়। “ন্যাচারাল মেডিসিন কমপ্রিহেনসিভ ডেটাবেস (Natural Medicine Comprehensive Database)” অনুযায়ী এই ইনজেকশন “হয়তো নিরাপদ (possibly safe)” শ্রেণীতে পড়ে, যদিও এই ডেটাবেসে গ্লুটাথায়োনের ত্বক ফর্সা করার কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে বেশি ডোজে গ্লুটাথায়োন ক্ষতিকর এবং এর কিছু খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। গ্লুটাথায়োনের ফলাফল নির্দিষ্টভাবে বলার আগে আরও কিছু গবেষণার প্রমাণ পাওয়ার প্রয়োজন আছে। এই ইনজেকশন অল্প কিছু স্কিন ক্লিনিকে পাওয়া যায়। তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করার আগে ভালভাবে খোঁজ নেওয়া উচিত।
৪. ত্বক ফর্সা করার প্রোডাক্ট (Product)
বাজারে বহু ধরণের রাসায়নিক ও ফর্সা হওয়ার প্রোডাক্ট কিনতে পাওয়া যায়। অধিকাংশ প্রোডাক্টে উপাদান হিসেবে থাকে অ্যাজেলিক অ্যাসিড (azelaic acid), আর্বুটিন (arbutin), রেটিনল (retinol), হাইড্রোকুইনোন (hydroquinone), গ্লাইকোলিক অ্যাসিড (glycolic acid), ল্যাকটিক অ্যাসিড (lactic acid), কোজিক অ্যাসিড (kojic acid) ইত্যাদি। এর মধ্যে কিছু উপাদান তাদের ব্লিচিং ক্ষমতার জন্যে জনপ্রিয়। যদিও কিছু প্রোডাক্ট খুব তাড়াতাড়ি ত্বকের রঙ হালকা করে দিতে পারে, এই ফল দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং এগুলিতে ব্লিচিং করার রাসায়নিক থাকায় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। নিয়মিত অনেকদিন ব্যবহার করার জন্য এগুলি উপযুক্ত না।
৫. আর্বুটিন
অনেক ফর্সা করার প্রোডাক্টে আর্বুটিন উপাদান হিসেবে থাকে। এটি ফ্রেকেলস, স্ট্রেচ মার্কস, ত্বকের রং হালকা করা বা বয়সের ছাপ কমানোর জন্য খুব কার্যকরী।
৬. ত্বক সাদা করার সার্জারি (Surgery)
আজকাল কালো দাগের সমস্যা কমানোর জন্য ইনভেসিভ (invasive) প্রক্রিয়ায় আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু “ত্বক সাদা করার সার্জারি” বলে কিছু হয়না। অধিকাংশ ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসাগুলি, যেমন লেজার টোনিং (toning) ও কেমিক্যাল পিল, নিরাপদ, কার্যকরী, নন-ইনভেসিভ প্রক্রিয়া যা ক্লিনিকেই করা যায়-হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন হয়না। অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত চর্মবিশেষজ্ঞরা এই প্রক্রিয়াগুলি নিয়মিত করে থাকেন।
ভারতে ত্বক সাদা করার চিকিৎসার খরচ
ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসার মোটামুটি খরচ পড়ে কেমিক্যাল পিলের জন্য ১,৮০০-৫,৫০০ টাকা, লেজার চিকিৎসার জন্য ৪,০০০-৩০,০০০ টাকা এবং ত্বক ফর্সা করার ইনজেকশনের জন্য ৬,০০০-৪০,০০০ টাকা। ফর্সা হওয়ার ক্রীমের দাম পড়ে ২০০-২,০০০ টাকার মধ্যে।
ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসার মূল্য পরিবর্তন হয় কেন?
- মূল্যগুলি পরিবর্তন হয় কারণ ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসা আপনার ত্বকের প্রকৃতি ও সমস্যা অনুযায়ী কাস্টমাইজ (customise) করা হয়।
- শরীরের কোন অংশের ত্বকের চিকিৎসা করা হচ্ছে সেটা অনুযায়ীও মূল্য নির্ধারণ করা হয়-মুখ একটি ছোট জায়গা, অতএব শরীরের অন্য বড় অংশের তুলনায় এতে খরচ কম পড়ে।
- এ ছাড়া ক্লিনিকের অবস্থান, চর্মবিশেষজ্ঞ ও থেরাপিস্টদের অভিজ্ঞতা, ব্যবহৃত উপকরণের মূল্য ইত্যাদির উপর নির্ভর করে খরচ কমবেশি হতে পারে।
ত্বক সাদা করার চিকিৎসার আগে ও পরের ফল
মুখের ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসার আগের ও পরের ফলাফল জানতে নিচের ছবিগুলি দেখুন
ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসার ফল কি চিরস্থায়ী হয়?
ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসার প্রভাব কয়েক মাস থেকে বছর অবধি স্থায়ী হয়।
চর্মবিশেষজ্ঞরা এই ফল আরও বেশিদিন অবধি ধরে রাখবার জন্য নিম্নলিখিত উপদেশগুলি মেনে চলতে বলেন:
- একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনশৈলী মেনে চলুন।
- ত্বককে ক্ষতিকর সূর্যালোক থেকে বাঁচাতে একটি ভাল সানস্ক্রিন (sunscreen) ব্যবহার করুন।
- একটি প্রাথমিক ত্বক পরিচর্যার রুটিন (routine) নিয়মিত অনুসরণ করে চলুন।
- মাঝেমাঝে কয়েকটি মেন্টেনেন্স (maintenance) সেশন করিয়ে নিন।
- ব্যালান্সড ডায়েট (balanced diet) বজায় রাখুন, বেশি করে জলপান করুন।
- ব্লিচিং ও কেমিক্যাল পিলের ফলাফল চিরস্থায়ী হয়না।
তবে লেজার চিকিৎসাকে ত্বক ফর্সা করার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান হিসেবে গণ্য করা হয়। লেজার দিয়ে ট্যাটু ও জন্মদাগ পুরোপুরি সারানো সম্ভব কিন্তু ট্যান ও মেচেতা (melasma) চিরকালের মত দূর করা সম্ভব না।
ভারতে ত্বক সাদা করার চিকিৎসা কি প্যাকেজ পাওয়া যায়
আপনি যদি নিরাপদ ও কার্যকরী ভাবে নিজের ত্বকের রঙের সামঞ্জস্য ফেরাতে চান, বিভিন্ন নামকরা স্কিন ক্লিনিকগুলি আপনার প্রয়োজনমত কাস্টমাইজড ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসার প্যাকেজ বানিয়ে দেবে। শরীরের কোন অংশ ফর্সা করতে চান তার উপর নির্ভর করে নিচের বিকল্পগুলির মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারেন:
- সারা শরীরের ত্বক হালকা করার চিকিৎসা
- মুখের ত্বক উজ্জ্বল করার চিকিৎসা
- বগলের ত্বক পরিষ্কার করার চিকিৎসা
- ঘাড়, হাত ও পায়ের ত্বক উজ্জ্বল করার চিকিৎসা
- প্রাইভেট (private) অংশ যেমন কুঁচকি ও বিকিনি এরিয়ার (bikini area) ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসা।
ত্বক সাদা করা নিয়ে প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ):
● আমার ত্বক বয়সের সাথে কালচে হয়ে যাচ্ছে কেন?
বয়সের সাথে ত্বকের নিজেকে সারিয়ে তোলার ক্ষমতা কমে যায়। ত্বকের উপরের স্তরে জমা মেলানিন এবং সময়ের সাথে হওয়া ত্বকের ক্ষতির কারণে ত্বকে কালচে ভাব দেখা দেয়।
● ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসা কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, ফর্সা হওয়ার জন্য লেজার, কেমিক্যাল পিল ও ফর্সা হওয়ার ইনজেকশনের মত চিকিৎসাপদ্ধতিগুলিকে নিরাপদ বলা হয় কারণ এগুলি ত্বকে মেলানিন তৈরি হওয়া কমায়। তবে আপনার জন্য কোন চিকিৎসাপদ্ধতি উপযুক্ত তা জানতে একজন ভাল চর্মবিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন।
● ত্বক ফর্সা করার চিকিৎসায় কি ত্বক খোসার মত উঠে আসে (peeling)?
ত্বকে রঙের সামঞ্জস্য আনতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চিকিৎসা করা সম্ভব; ত্বক খোসার মত উঠে আসা (peeling) তাদের মধ্যে একটি।
● বগলের ত্বক উজ্জ্বল করার চিকিৎসায় কটি সেশন লাগে?
বগলের ত্বক উজ্জ্বল করতে ৬-৮টি সেশন চিকিৎসা করাতে হয়।
আশা করি ত্বক ফর্সা করার ব্যাপারে এই আর্টিকলটি আপনাদের তথ্যবহুল ও কৌতূহলোদ্দীপক লেগেছে। গ্রীষ্মকাল এসে গেছে, অতএব আপনি যদি নিজের উজ্জ্বল, মসৃণ ত্বক সবাইকে দেখাতে চান তবে নিকটবর্তী একটি স্কিন ক্লিনিকে চটপট অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করে ফেলুন।