চুল গজানোর সেরা চিকিৎসা কি?
প্রায় ২.১ কোটি মহিলা ও ৩.৫ কোটি পুরুষ চুল পড়ার সমস্যায় ভোগেন। পুরুষরা ৩৫ বছরে পা দেওয়ার সময় তাদের প্রায় ৪০% চুল পড়তে শুরু করে, ৮০ বছর বয়সে সেটি ৭০% এ গিয়ে থেকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর বয়সে চুল পড়ার পরিমাণ হয় প্রায় ৮০%। সৌভাগ্যবশত, ওষুধ ও প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির ফলে আজ এর চিকিৎসা করে নতুন চুল গজানো সম্ভব। চুল পড়া ও পাতলা হয়ে যাওয়ার চিকিৎসা হিসেবে বিভিন্ন মাথায় লাগানোর টপিকাল সল্যুশন (topical solutions), খাওয়ার ওষুধ ও নন–সার্জিক্যাল (non-surgical) প্রক্রিয়া আছে।
প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা (পিআরপি) থেরাপি
প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা থেরাপি/ পিআরপি (Platelet Rich Plasma Therapy) এদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি কারণ এটি নন–ইনভেসিভ (non-invasive) ও নন–সার্জিক্যাল (non-surgical) এবং ধারাবাহিকভাবে ভাল ফল দেয়।
Read More: Non-Surgical Hair Loss Treatment
আসুন ভারতে উপলব্ধ বিভিন্ন চুল পড়ার চিকিৎসার তফাৎগুলি জেনে নিই:
মেসোথেরাপি বনাম পিআরপি
মেসোথেরাপি দুদিক থেকে পিআরপির থেকে আলাদা: প্রথমতঃ এতে ইনজেকশনগুলি অনেক অগভীর (very superficial)। তাছাড়া পিআরপি ইনজেকশনে প্লেটলেট ব্যবহৃত হয়, কিন্তু মেসোথেরাপি ইনজেকশনে ব্যবহৃত হয় তরলীকৃত (diluted) ওষুধ যেমন মিনক্সিডিল, ভিটামিন, বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্ট (nutrients) এবং গ্রোথ ফ্যাক্টর (growth factors)।
- পিআরপি ও মেসোথেরাপি দুটিই ১৯৭০–এর দশক থেকে শুরু করা হয়েছে। কিন্তু পিআরপির নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা হয়েছে অনেক বেশি। মেসোথেরাপি ১৯৭০ নাগাদ চালু হলেও এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনো অপ্রতুল। চর্মবিশেষজ্ঞরা মেসোথেরাপির থেকে পিআরপিকে বেশি কার্যকরী মনে করেন।
- পিআরপি মেসোথেরাপির তুলনায় কম সময়সাপেক্ষ, খরচের দিক দিয়েও সাশ্রয়কর।
- পিআরপি খুব নিরাপদ কারণ এতে ক্লায়েন্টের নিজের প্লেটলেট ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে মেসোথেরাপিতে বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণ ইনজেকশন দেওয়া হয়, যার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে।
- পিআরপি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের সঙ্গেও ব্যবহার করা যায় কিন্তু মেসোথেরাপি যায় না।
পিআরপি বনাম স্টেম সেল থেরাপি
প্লেটলেটের মত স্টেম সেলও আহত ও প্রদাহশীল টিস্যু (tissue) সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। স্টেম সেল শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন কোষে পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। এদের এই বহুমুখিতার জন্য এরা সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাথার চামড়ায় অর্থাৎ স্ক্যাল্পে (scalp) ইনজেকশন দিলে এই স্টেম সেল সেখানকার আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলির স্থান অধিকার করে নেয়। অতএব সাধারণভাবে যে টিস্যু সেরে উঠতে পারেনা তাদের ক্ষেত্রে স্টেম সেল প্রয়োগ করা যেতে পারে। চুল পড়ার জন্য ব্যবহৃত পিআরপি ও স্টেম সেল থেরাপির প্রধান তফাৎগুলি হল:
- পিআরপিতে প্লেটলেট রিচ প্লাজমা ক্লায়েন্টের নিজের দেহ থেকে নেওয়া হয়। স্টেম সেল থেরাপিতে স্টেম সেল সংগ্রহ করা হয় গবেষণাগারে, ইঁদুরের লোম ও সবুজ আপেলের মরণশীল ভ্রূণ থেকে।
- ক্লায়েন্টের নিজের প্লেটলেট ও প্লাজমা ব্যবহার করার ফলে পিআরপি চিকিৎসা সাধারণতঃ শরীর প্রত্যাখ্যান করেনা। স্টেম সেল থেরাপিতে এই ঝুঁকি থাকে।
- যেহেতু পিআরপিতে সেন্ট্রিফিউজ (centrifuge) করার পর অবিলম্বে প্লেটলেটগুলি ইনজেকশন দিয়ে দেওয়া হয়, তাই আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে এতে জীবিত প্লেটলেটের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
Note: – স্টেম সেল নিষ্কাশন ও পরিবহনে বেশ কিছুটা সময় লাগার ফলে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনা যে ইনজেকশনের সময়ে স্টেম সেলগুলি জীবিত আছে কি না। কিছু গ্রোথ ফ্যাক্টর হয়ত থাকে, তবে তার কার্যকারিতা অপেক্ষাকৃত কম হয়।
Read More: ভারতে চুলের পিআরপি (PRP) চিকিৎসার খরচ ও সফলতার হার কী?
পিআরপি বনাম হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট
হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট একটি ইনভেসিভ সার্জিক্যাল প্রক্রিয়া যাতে মাথার স্ক্যাল্প থেকে এক ফালি চামড়া ও তার সংলগ্ন হেয়ার গ্রাফটগুলি (hair grafts) (সাধারণতঃ মাথার পাশের বা পিছনের দিকে থেকে নিয়ে) যেখানে চুল পড়ে গেছে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়। অর্থাৎ স্ক্যাল্পের এক অংশ থেকে চুল নিয়ে অন্য অংশে সরিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে এই চুল নতুনভাবে গজাতেও পারে, বা নাও পারে।
তফাৎ হল:
- পিআরপি নন–ইনভেসিভ ও নন–সার্জিক্যাল, এতে বড়জোর লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া (local anesthesia) দিয়ে অসাড় করা যেতে পারে। হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট তা নয়।
- হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টে স্ক্যাল্পের ত্বক হেয়ার গ্রাফটকে প্রত্যাখ্যান করে দিতে পারে, তাহলে এই চিকিৎসা বিফল হয়ে যাবে। পিআরপিতে ক্লায়েন্টের নিজের প্লেটলেট ব্যবহার হওয়ার ফলে এই সম্ভাবনা কম।
- এই দুটি প্রক্রিয়ার দুটি ভিন্ন ধরণের উপকারিতা আছে। যে জায়গায় চুল পড়ে টাক হয়ে গেছে এবং নতুন চুল আর গজানোর সম্ভাবনা নেই, সেখানে পিআরপির কার্যকারিতা কম, হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টই একমাত্র বিকল্প। পিআরপি কেবল হেয়ার ফলিকলকে উজ্জীবিত করে এবং স্ক্যাল্পের স্বাস্থ্যোন্নতি ঘটিয়ে পাতলা হয়ে যাওয়া ও প্রতিস্থাপিত চুলকে নতুন ভাবে গজাতে সাহায্য করে।
এখানে একটি আকর্ষণীয় ইনফোগ্রাফিক:
পিআরপি চিকিৎসা বনাম মিনক্সিডিল
মিনক্সিডিল ওষুধটি খাওয়া যেতে পারে বা মাথায় লাগানো (topically applied) যেতে পারে। চুল পড়ার চিকিৎসায় এর মাত্রা ও ব্যবহারপদ্ধতি একজন চর্মবিশেষজ্ঞর থেকে জেনে নেওয়া উচিত। মিনক্সিডিল একটি ধমনীপ্রসারক (vasodilator)। পিআরপি ও মিনক্সিডিল দুটিই নতুন চুল গজানোর কার্যকরী চিকিৎসা, তবে স্টাডিতে প্রমাণিত হয়েছে যে একসাথে পিআরপি ও মিনক্সিডিল ব্যবহার করলে শুধু মিনক্সিডিলের চেয়ে বেশি ভাল ফল হয়।
একটি স্টাডিতে ২০–৫০ বছর বয়স্ক পুরুষদের, যাঁরা অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়ায় (androgenic alopecia) (অর্থাৎ বয়সজনিত চুল পড়া) ভুগছেন, তাদের দুটি দলে ভাগ করা হয়। একটি দলকে পিআরপি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়, অন্যটিকে মিনক্সিডিল (৫–১০%) ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায় যে পিআরপি দিয়ে চিকিৎসিত দলে ৭৬% ব্যক্তি লাভ পেয়েছেন, কিন্তু মিনক্সিডিল ব্যবহারকারী দলে মাত্র ৪৮% ব্যক্তি লাভ পেয়েছেন।বহু স্টাডি এই মতামতে উপনীত হচ্ছে যে পিআরপি ও মিনক্সিডিল মিলিতভাবে আরও ভাল ফল দেয়। সাধারণতঃ মিনক্সিডিলের সঙ্গে পিআরপি সংযুক্ত করে চিকিৎসা করা হয়।
পিআরপি বনাম ফিনাস্টেরাইড
ফিনাস্টেরাইড একটি ৫–আলফা রিডাক্টেজ এনজাইমের ইনহিবিটর (5-alpha reductase enzyme inhibitor) যা পুরুষদের চুল পড়ার চিকিৎসায় ১ মি.গ্রা. ডোজে অনুমোদিত। মিনক্সিডিলের মতো এটিও মুখে খাওয়া যায় বা মাথায় লাগানো যায়।
প্রধান তফাৎগুলি:
- ফিনাস্টেরাইড কেবল পুরুষদের জন্য অনুমোদিত, কিন্তু পিআরপি মহিলা ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই কার্যকরী।
- পিআরপি খুবই নিরাপদ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। ফিনাস্টেরাইড সব সময় একা কাজ করেনা। অল্প কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিবৃত হওয়ার ফলে অনেকে এই ওষুধটি নিতে সংকোচ বোধ করেন।
চুল পড়ার জন্য পিআরপি বনাম লেজার
- পিআরপিতে ক্লায়েন্টের রক্তের প্লেটলেট ব্যবহৃত হয়; এই প্লেটলেট সেন্ট্রিফিউজ ও সক্রিয় করে ইনজেকশন দেওয়া হয়, এতে গ্রোথ ফ্যাক্টর তৈরি হয়ে চুল পড়া কমায় ও চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। লেজার চিকিৎসায় একটি বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (wavelength) আলো স্ক্যাল্পের সংশ্লিষ্ট অংশে ফেলে সেখানকার রক্ত চলাচল বাড়িয়ে চুল পড়া কমানোর চেষ্টা করা হয়
- লেজার ত্বকের প্রদাহ কমাতে পারে ও চুলের কোষে এনার্জি (energy)(এটিপি) সরবরাহ বাড়াতে পারে। অন্যদিকে পিআরপি চুলের কোষকে উজ্জীবিত করে বিভিন্ন গ্রোথ ফ্যাক্টর সরবরাহ করে।
- তুলনামূলক ভাবে দেখলে দুটি চিকিৎসাপদ্ধতি একই ভাবে চুল পড়া প্রতিরোধ করে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। তবে প্লেটলেট রিচ প্লাজমা অনেক তাড়াতাড়ি ফলাফল দেয়।
পিআরপি বনাম পিআরএফএম চিকিৎসা
প্লেটলেট রিচ ফাইব্রিন ম্যাট্রিক্স বা পিআরএফএম হচ্ছে পিআরপিরই কিছুটা উন্নত সংস্করণ। ফাইব্রিন হল একধরণের অদ্রবণীয় (insoluble) প্রোটিন যা রক্ত জমাট বাঁধার সময় তৈরি হয় ও প্লাজমাতেই থাকে। প্লেটলেটের সাথে এগুলিও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে। পিআরএফএম–এর ক্ষেত্রে সেন্ট্রিফিউজ করা প্লেটলেটের আরো বেশি সক্রিয় একটি রূপ ফাইব্রিন ম্যাট্রিক্সের মধ্যে একত্রিত ও কেন্দ্রীভূত করা হয়। এর জন্য সংগৃহীত রক্তের নমুনার সাথে এন্টিকোয়াগুলেন্ট (anticoagulant) মেশানো থেকে বিরত থাকতে হয়।
প্লেটলেট রিচ ফাইব্রিন ম্যাট্রিক্স চিকিৎসা চুল ঝরার জন্য একটি অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি, যা স্ক্যাল্পের সংশ্লিষ্ট জায়গায় ইনজেকশন দিয়ে টিস্যুকে নতুনভাবে বিভাজন ও বৃদ্ধি করানো যেতে পারে। এর ফলে চুল পড়ার সমস্যার খুব ভালো উন্নতি দেখা যেতে পারে। পিআরপি ও পিআরএফএম চিকিৎসা দুটিতেই স্পষ্ট দর্শনীয় ফলাফল পেতে ৪–৬টি সেশনের প্রয়োজন।
সংক্ষেপে, পিআরএফএম পিআরপি চিকিৎসার থেকে কিছুটা আলাদা হলেও দুটি সমান ভাবে কার্যকরী।
নতুন চুল গজানোর সেরা চিকিৎসা কি?
এই ভিডিওটি এখনই দেখুন:
পিআরপি কি চুল পড়ার স্থায়ী সমাধান?
চুল পড়া একটি কঠিন সমস্যা, তবে এখন অনেকগুলি বিকল্প চিকিৎসাপদ্ধতি উপলব্ধ হওয়ার ফলে এটি অতিক্রম করাও সম্ভবপর।যখন জেনেটিক (genetic) কারণে চুল পড়ার সমস্যায় পিআরপি ব্যবহৃত হয়, তখন ফলাফল সারা জীবন স্থায়ী নাও হতে পারে। তবে কোনো রোগের কারণে চুল পড়লে পিআরপি স্থায়ী সমাধান দিতে পারে। পিআরপি করিয়ে পাওয়া ফলাফল বজায় রাখতে টানা মিনক্সিডিল ব্যবহার করে যেতে হবে।
আরো বিশদ তথ্য জানতে, অলিভা ক্লিনিকে দেখা করুন! আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন শাখাগুলি এখন হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, কলকাতা, পুনে, ভাইজ্যাগ ও কোচিতে অবস্থিত।