কি ভাবে ফর্সা হওয়া যায় -ত্বকের রং ফর্সা করা নিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণা ও সত্য
আমরা সাধারণভাবে বিশ্বাস করে থাকি যে শ্যামবর্ণ ত্বকের চেয়ে ফর্সা সাদা ত্বক বেশি সুন্দর। এতদিন ধরে সংবাদ মাধ্যমের প্রচার করা তথ্য দেখে ও শুনে আমরা অনেকেই ভাবি যে ত্বকের রঙ কালো থেকে সাদা করা সম্ভব। কিন্তু এটা কি আপনি জানেন এই তথ্য শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে সম্পূর্ণ ভুল!
ত্বকের স্বাভাবিক রং বদলানো সম্ভব না, তবে চিকিৎসার দ্বারা রোদে পোড়া ট্যান, কালো ছোপ ও ব্রণের কালো দাগ নিরাপদ ও কার্যকরী ভাবে হালকা করা সম্ভব। এই উন্নত নান্দনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মাধ্যমে ত্বককে সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে উজ্জ্বল করা যায়। ফর্সা হওয়ার জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে সবার যে ভুল ধারণাগুলি রয়েছে, সেগুলি কাটাতে এই আর্টিকলটি পুরোটা পড়ুন।
আমাদের ত্বকের রং কী হবে তা কিভাবে ঠিক হয়?
মানুষের ত্বক গাঢ় থেকে হালকা বাদামি হতে পারে। এর জন্য দায়ী আমাদের জেনেটিক মেকআপ ও কিছুটা হল সূর্যরশ্মির অবদান।
Read More: Skin Lightening Treatment At Oliva
শ্যামবর্ণ ত্বককে কি ফর্সা করে তোলা সম্ভব?
কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি যদি দাবি করে যে তা আপনার ত্বকের রং আকস্মিক ভাবে অনেকখানি পরিবর্তন করে দিতে পারে, তবে সারা পৃথিবীর চর্মবিশেষজ্ঞরা ও প্লাস্টিক সার্জেন (শল্য চিকিৎসকরা) সাবধান করেন সেটিকে অন্ধভাবে বিশ্বাস না করতে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে এটি অসম্ভব। বেশ কিছু ত্বকের সমস্যা ত্বকের রং ও ঔজ্জ্বল্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। একজন অভিজ্ঞ চর্মবিশেষজ্ঞ যখন এই সমস্যাগুলোর ঠিকমত চিকিৎসা করেন, তখন ত্বকের সামগ্রিক উন্নতি হয়ে তা উজ্জ্বল, মসৃণ ও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে।
“ফর্সা হতে চেষ্টা করার” ব্যাপারটি এত বিতর্কিত কেন?
ফেয়ারনেস ক্রিম (fairness cream )পুরুষ ও মহিলা উভয়ের মধ্যেই জনপ্রিয়। বহু প্রচলিত বিজ্ঞাপনের জন্য আমাদের ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে শ্যামবর্ণ ত্বকের অধিকারী একজন প্রায় জাদুমন্ত্রবলে ফর্সা হয়ে উঠতে পারেন। এই পণ্যগুলি, যেহেতু এত বেশি বাজার দখল করে রেখেছে, সে কারণে এগুলি কেনা থেকে বিরত থাকা শক্ত।
কিছু সতর্কবাণী:
- এটি লক্ষ করা গুরুত্বপূর্ণ যে বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ ক্রিমে উপাদান হিসেবে থাকে স্টেরয়েড(steroids), হাইড্রোকুইনোন(hydroquinone), পারদ (mercury) এবং ট্রেটিনয়েন (tretinoin)। ত্বকের ক্রিম একমাত্র চর্মবিশেষজ্ঞের তত্বাবধানে ব্যবহার করা উচিত এবং সেটিও একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া বহুদিন ধরে এই ক্রিমগুলি ব্যবহার করলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যেমন স্থায়ী ভাবে ত্বকের রং পরিবর্তন ও অসামঞ্জস্য, ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া ও কুঁচকে যাওয়া, ত্বক অস্বাভাবিক সংবেদনশীল হয়ে যাওয়া, ফুসকুড়ি বেরোনো, চুলকানি এবং জ্বালা ভাব। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এই ক্ষতিকারক উপাদানগুলি ত্বক থেকে রক্তে প্রবেশ করে শরীরে গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
- এই ফর্সা হওয়ার পণ্যগুলি ত্বকের নিজস্ব প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করে এবং ত্বকে মেলানিন জমা হচ্ছে যে কারণে সেটির কোনো বিহিত করতে পারেনা।
- রাতারাতি কীভাবে ফর্সা ত্বক পাবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া এই পদ্ধতি ও পণ্যগুলি সহজলভ্য হওয়ার ফলে মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে দোসর হয়েছে অসংখ্য আর্টিকল ও ভিডিও, যাতে এই ধরণের পণ্যের প্রশংসা করা হয় ও ফর্সা ত্বকের জন্য সৌন্দর্যের পরামর্শ ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় । এই ধরণের দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা চিকিৎসা গবেষণার প্রমাণ নেই।
তফাৎ জানুন
পদ | ব্যাখ্যা | চিকিৎসা পদ্ধতি |
ফর্সা ত্বক | ফর্সা রঙের ত্বক | কোনো চিকিৎসা দিয়ে শ্যামবর্ণ ত্বককে উজ্জ্বল সাদা করা সম্ভব না। |
উজ্জ্বল (brighten) বা চকচকে ত্বকের জন্য সৌন্দর্যের টিপস বা পদ্ধতি | ত্বকের সামগ্রিক সামঞ্জস্য ও ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনা | কেমিক্যাল পিল (peel), লেজার টোনিং |
ত্বক হালকা বা লাইটেন করার পদ্ধতি | ত্বকের প্রকৃত রং ফিরিয়ে আনা | লেজার টোনিং |
ত্বক বিবর্ণ বা ডিসকালার (Discoloration) হয়ে যাওয়া | কালো দাগ বা পিগমেন্ট যাতে ত্বকের রং বদলে যায় | কেমিক্যাল পিল |
পিগমেন্টেশন | ত্বকের দাগ ও অমসৃণতা | লেজার টোনিং |
ত্বকের নিষ্প্রভভাব ও বয়সজনিত ছোপ | বয়সের সাথে ত্বকের নিষ্প্রভভাব ও কালো-বাদামি ছোপ | চর্মবিশেষজ্ঞর দেওয়া ত্বকের রং পরিষ্কার করার লাইটেনিং ক্রিম, তার সাথে লেজার টোনিং |
কালো দাগ | বেশি রোদে পুড়ে যাওয়ার ফলে ত্বকে কালো-বাদামি ছোপ ছোপ দাগ | কেমিক্যাল পিল |
ইনস্ট্যান্ট/তৎক্ষণাৎ ফর্সা হওয়ার পদ্ধতি অবলম্বনের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ইনস্ট্যান্ট/তৎক্ষণাৎ ফর্সা হওয়ার পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতে গেলে নিম্নলিখিত বিপত্তিগুলি ঘটতে পারে:
- ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়া
- ত্বকের অমসৃণ ছোপ ছোপ দাগ হওয়া
- ত্বকের নিচের কৈশিক শিরা (capillaries) প্রকট হয়ে দেখা যাওয়া
- বেশি ব্রণ বেরোনো
- রোদে ত্বক সংবেদনশীল (sensitive) হয়ে যাওয়া
- কালো দাগ কমার বদলে বেড়ে যাওয়া, নতুন দাগ দেখা দেওয়া (Rebound paradoxical pigmentation)
- মুখে অবাঞ্ছিত লোম গজানো
- ত্বকে অ্যালার্জি
আপনি এখন জেনে গেছেন চটজলদি ফর্সা হওয়ার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আপনি কি বিপদে পড়তে পারেন; এখন দেখা যাক ত্বক মসৃন ও উজ্জ্বল করার জন্য চর্মবিশেষজ্ঞরা নিরাপদ ও কার্যকরী কোন পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দেন।
নিরাপদভাবে ত্বক উজ্জ্বল করার চিকিৎসা
আপনার চর্মবিশেষজ্ঞ আপনাকে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করার নিম্নলিখিত চিকিৎসাপদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতে পরামর্শ দিতে পারেন, এককভাবে বা একসাথে:
- লেজার টোনিং: এই স্কিন লাইটেনিং পদ্ধতিতে অত্যাধুনিক লেজার টেকনোলজির মাধ্যমে ত্বকের গভীরের কালো পিগমেন্টেশন দূর করা হয় ও ত্বকের বয়েসের ছাপ আসা প্রতিরোধ করা হয়। এতে আপনার চর্মবিশেষজ্ঞ কিউ–সুইচড এন ডি: ইয়াগ (Q-switched Nd:YAG) লেজার বিম দিয়ে আপনার ত্বকের অতিরিক্ত মেলানিনকে ভেঙে দেবেন। পরে শরীরের প্রতিরক্ষক কোষগুলি এসে এই মেলানিনকে দূর করে দেবে।
এই ভিডিওটি এখনই দেখুন:
- মাইক্রোডার্মাব্রেশন: আপনার চর্মবিশেষজ্ঞ ত্বকের উপরের মৃত কোষগুলিকে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ক্রিস্টাল বা ডায়মন্ড টিপ লাগানো একটি এব্রেসিভ বা ঘর্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে সরিয়ে দেবেন। এর ফলে ত্বকের নিষ্প্রভভাব কেটে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
- কেমিক্যাল পিল: এই পদ্ধতিতে আলফা বা বিটা হাইড্রক্সি অ্যাসিড দেওয়া একটি পিলিং সল্যুশন ত্বকের উপর লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই পিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত ভাবে ত্বকের উপরের কয়েকটি স্তর সরিয়ে দেওয়া বা এক্সফোলিয়েট করা হয়, যাতে নিচ থেকে নতুন, মসৃন ত্বক তৈরি হয়। এতে কালো ছোপ বা বিবর্ণতা এবং ত্বকের অল্প কুঁচকানো ভাব (রিঙ্কল) দূর করা যায়।
- আর্বুটিন: বিয়ারবেরি গাছের নির্যাস থেকে পাওয়া এই প্রাকৃতিক উপাদানটি ত্বকের রং পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
- রেটিনল: ভিটামিন এ–র একটি প্রাকৃতিক ফর্ম। চর্মবিশেষজ্ঞরা রেটিনল ত্বকের এক্সফোলিয়েশন ও কোলাজেন তৈরির জন্য দিয়ে থাকেন।
- ভিটামিন সি: সবজি ও ফলমূলে অনেক ভিটামিন সি পাওয়া যায়। ডাক্তাররা ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য ভিটামিন সি দেওয়া ক্রিম বা লোশন লাগাতে দেন।
Read More: What Is The Cost Of Skin Lightening Treatment?
দীর্ঘদিন ধরে ত্বকের উজ্জ্বলতা কি করে বজায় রাখা যায়?
এইসব চিকিৎসাপদ্ধতি ও ক্রিমের দ্বারা ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয় ঠিকই, কিন্তু এই সৌন্দর্য বজায় রাখতে গেলে নিম্নলিখিত কাজগুলি নিয়মিত করা উচিত।
এই ভিডিওটি এখনই দেখুন:
১. একটি ত্বক পরিচর্যার রুটিন নিয়মিতভাবে মেনে চলা:
একটি দৈনন্দিন ত্বকের যত্ন ও সৌন্দর্য্য রক্ষার রুটিন ঠিকমতো তৈরি করা ও মেনে চলা প্রয়োজন। ত্বক সুস্থ ও পরিষ্কার রাখার জন্য আপনাকে নিজের ত্বকের প্রকৃতি বুঝতে হবে ও সে অনুযায়ী প্রোডাক্ট বেছে নিতে হবে। নিখুঁত সুন্দর ত্বক পাওয়ার জন্য নীচে দেওয়া ৪টি ধাপ অনুসরণ করুন।
- ক্লেনজিং/পরিষ্কার করা–সকালে ও সন্ধ্যায় দুবার করে একটি ভালো ক্লিনজার দিয়ে ধুলো, ময়লা ও মেকআপ পরিষ্কার করুন
- ময়েশ্চারাইজিং–একটি উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার দিয়ে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ওয়াটার–বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
- এক্সফোলিয়েটিং–একটি হালকা স্ক্রাব সপ্তাহে ১–২বার ব্যবহার করুন। ত্বকের পোর (pore) গুলি পরিষ্কার ও উন্মুক্ত থাকবে।
- সানস্ক্রিন লাগানো–আকাশে মেঘ থাকুক বা না থাকুক, বেরোনোর ১৫–২০ মিনিট আগে নিয়মিত এস পি এফ ৩০ বা তার উপরের এস পি এফ যুক্ত সানস্ক্রিন ত্বকে লাগান।
২. স্বাস্থ্যকর ডায়েট করুন:
ব্যালান্সড ডায়েট খেলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক সুস্থ ও জেল্লাদার থাকে। ত্বকের জন্য বাড়ির তৈরি সৌন্দর্য্য পরামর্শের মধ্যে ফল, সবুজ শাকসবজি, মাছ এবং হোল গ্রেন দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখবেন। অ্যালকোহল, কড়া করে ভাজা খাবার, খুব বেশি চিনি বা শর্করা যুক্ত খাবার কম খাবেন।
আশা করি এই আর্টিকলটি আপনার তথ্যসমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় লেগেছে। মনে রাখবেন, ত্বক ফর্সা করার মিথ্যা আশায় না গিয়ে, একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়ে ত্বকের টাইপ ও সমস্যা সঠিকভাবে যাচাই করিয়ে নেবেন। সব দেখে, বুঝে তাৎপর্য্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিন।একটি নামকরা স্কিন ক্লিনিকে চিকিৎসা করান এবং নিরাপদ ও কার্যকরী স্কিন ব্রাইটেনিং (brightening) ও লাইটেনিং (lightening) চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির একটি বা একাধিক বেছে নিন, পান সুস্থ, উজ্জ্বল, সুন্দর ত্বক!