34486
page-template/template_concern_page.php
https://www.olivaclinic.com/bengali/?p=34486
34486
page-template/template_concern_page.php

পেজ শিরোনাম: ত্বকের অকালবার্ধক্য (premature aging): অর্থ, কারণ ও চিকিৎসা

Highlights

  • ● আজকের যুগে অকালবার্ধক্যের সমস্যা অনেকেরই হয় কারণ আমাদের জীবনে এখন অনেক চাপ এবং আমাদের জীবনশৈলীও ত্রুটিপূর্ণ।
  • ● বয়স হওয়া অনিবার্য, তবে এমন চিকিৎসাপদ্ধতি আছে যাতে চেহারা থেকে বয়সের ছাপ সরানো যায়।
  • ● সুনিপুণ চর্মবিশেষজ্ঞরা বয়সের ছাপ দূর করতে পারেন।
  • ● একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ত্বকের গঠন, বার্ধক্যের কারণ ও চিকিৎসার বিকল্প পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে আপনার বিশদ জানা প্রয়োজন।

বার্ধক্য ও বয়স বাড়ার সমস্যাগুলি কি কি?

বয়স বাড়ার সাথে শরীরের প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ত্বকের বহির্ভাগে পরিবর্তন দেখা যায় যেমন বলিরেখা, ভাঁজ পড়া, সূক্ষ্ম লাইন (fine line), লাফ লাইন (laugh lines), ত্বক ঝুলে পড়া (sagging) ইত্যাদি।

কিছু পারিপার্শ্বিক ও কিছু অভ্যন্তরীণ কারণের ফলে বার্ধক্য দেখা দেয়। এর মধ্যে পড়ে জেনেটিক (genetic) পরিবর্তন বা পরিবেশের প্রভাব বা বাহ্যিক কোন অনুঘটক যা বয়স বাড়ার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার গতিবেগ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে আমাদের ত্বক ক্লান্ত, শুষ্ক, ঝুলে পড়া, বলিরেখা ও গভীর গর্তসম্পন্ন হয়ে ওঠে যার ফলে একে বৃদ্ধ লাগে।

প্রকারভেদ ও শ্রেণীবিন্যাস

কি কারণে এই বার্ধক্য দেখা দিচ্ছে তার উপর নির্ভর করে এর প্রকারভেদ করা যেতে পারে। নীচে দেখুন প্রাথমিক বা মেডিক্যাল (medical) কারণগুলি-

  • জেনেটিক বা অভ্যন্তরীণ বার্ধক্য: আমাদের জেনেটিক্স বা ডিএনএ (DNA) আমাদের সময়ের সাথে আসা বার্ধক্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। অতএব, এটি ব্যক্তিবিশেষে তাড়াতাড়ি বা দেরিতে আসতে পারে, এবং প্রক্রিয়াটি ধীর গতির। আমাদের দেহে থাকা ফ্রি র‍্যাডিকালগুলি (free radicals) এর গতিবেগ বাড়িয়ে দিতে পারে।

এই বার্ধক্যের লক্ষণগুলি হল:

  • ত্বক ঝুলে পড়া: ত্বকের নীচে থাকা কোলাজেন (collagen) ও ইলাস্টিন (elastin) প্রোটিনগুলি (proteins) ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এই উপসর্গ দেখা দেয়।
  • এজ স্পট (age spots): ইউভি (UV) রশ্মি ত্বকে লেগে পিগমেন্টেশন (pigmentation) ও রঙের অসামঞ্জস্য তৈরি করলে এজ স্পট দেখা যায়।
  • সূক্ষ্ম লাইন ও বলিরেখা: আমাদের বয়স বাড়লে ত্বক পাতলা হয়ে যায়; এর স্থিতিস্থাপকতা (elasticity) ও আর্দ্রতা কমে যায়; এতে ভাঁজ ও ঢাল দেখা যায় যাকে বলিরেখা বলা হয়।
  • শুষ্ক, পাতলা ও স্বচ্ছ ত্বক: এগুলি দেখা যায় ত্বকে ঘাম ও তেল (sebum) নিঃসরণ কমে যাওয়ার ফলে। হরমোনের (hormonal) মাত্রা (ইস্ট্রোজেন)(estrogen) কমে গেলে, বিশেষতঃ মহিলাদের ক্ষেত্রে, ত্বকের আর্দ্রতা কমে ও মৃত স্তরের পরিমাণ বেড়ে ত্বক নিষ্প্রভ ও শুষ্ক দেখায়।

উপরে উল্লেখিত ব্যাপারগুলি ছাড়া, আনুষঙ্গিক যে কারণগুলির ফলে বার্ধক্য আসতে পারে তা হল-

  • মেক্যানিকাল (mechanical) বার্ধক্য: এটি হল সেই বলিরেখাগুলি যা আমরা ত্বক নড়াচড়া করার ফলে বা বারংবার মুখে নানারকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করা, যেমন কপাল কুঁচকানো, মুচকি হাসা, ভুরু কুঁচকানো, মুখ ব্যাদন করে হাসা ইত্যাদির ফলে দেখা দেয়। মেক্যানিকাল বার্ধক্যের মধ্যে পড়ে: চোখ, ভুরু ও মুখের চারপাশের গতিশীল বলিরেখা (dynamic wrinkles)।
  • বাহ্যিক বা পারিপার্শ্বিক বার্ধক্য: বাহ্যিক কারণ যেমন সূর্যালোকের প্রভাব, স্ট্রেস (stress), ধূমপান, দূষণ, এগুলি বয়স তাড়াতাড়ি বাড়াতে পারে। এর লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় সূক্ষ্ম লাইন, বলিরেখা, কালো ছোপ, ত্বকে রঙের অসামঞ্জস্য, সান স্পট (sun spot) ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে কেবল সূর্যালোকের প্রভাবই ত্বকে বয়সের ছাপ ফেলার জন্য ৮০% দায়ী।

বার্ধক্য কিসের জন্য হয়?

প্রাথমিক কারণগুলি বয়স বাড়ার প্রভাব আরম্ভ হওয়ার জন্য দায়ী, এবং আনুষঙ্গিক কারণগুলি বার্ধক্যের গতিবেগ বাড়ানোর জন্য দায়ী।

বার্ধক্যের প্রাথমিক কারণ হল –

  • সূর্যালোকের প্রভাব – দীর্ঘদিন ধরে ইউভি রশ্মি ত্বকে লাগলে ত্বকের গঠন অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, কারণ ত্বকের ভিতরের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ফাইবার (fibre) ভেঙ্গে পড়ে। এর ফলে ত্বকে বয়সের ছোপ (এজ স্পট), বলিরেখা, সূক্ষ্ম লাইন ও অকালবার্ধক্যের অন্যান্য চিহ্ন দেখা দেয়।
  • ধূমপান – ধূমপান বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করে দেয় এবং অকালে বলিরেখা দেখা যায়। তামাক ত্বক নষ্ট করে তার স্বাভাবিক বার্ধক্যের প্রক্রিয়ার গতিবেগে বাড়িয়ে তুলতে পারে। ধূমপান করলে ত্বকে ফ্রি র‍্যাডিকাল জমে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে, এবং ত্বকের সেরে ওঠার ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। ত্বকে রক্ত চলাচল কমিয়ে এটি ত্বককে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া থেকে বঞ্চিত করতে পারে।
  • আর্দ্রতার অভাব – বয়স বাড়লে ত্বক আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়। আর্দ্রতা হারালে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় যার ফলে সূক্ষ্ম লাইন বা বলিরেখা দেখা যেতে পারে।

বয়স বাড়ার আনুষঙ্গিক কারণগুলি হল –

  • মদ্যপান – অত্যধিক মদ্যপান করলে ত্বকে পুষ্টি ও আর্দ্রতার অভাব হতে পারে যার ফলে অকালবার্ধক্য হয়।
  • খুব বেশি মাত্রায় স্ট্রেস – দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেসের ফলে ত্বক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, বিশেষতঃ মুখে বলিরেখা, ভাঁজ পড়া বা সূক্ষ্ম লাইন দেখা যেতে পারে

চিহ্নিত করা (diagnosis)

আপনার ত্বকে বার্ধক্যের লক্ষণগুলি সনাক্ত করা ও তার সম্ভাব্য কারণগুলি খুঁজে বের করার জন্য একজন চর্মবিশেষজ্ঞই উপযুক্ত মানুষ। খুঁটিয়ে পরীক্ষা করার পর আপনার ডাক্তার আপনাকে এমন চিকিৎসাপদ্ধতির পরামর্শ দিতে পারবেন যাতে আপনার বয়সজনিত সমস্যা কমে এবং যা আপনার ত্বকের উপযোগী।

আপনার কি ত্বকের অকালবার্ধক্য হওয়ার ঝুঁকি আছে?

বার্ধক্যের থেকে কারুর নিস্তার নেই, কিন্তু যারা অনেকক্ষণ সূর্যালোকে কাজ করেন তাদের চেহারায় বয়সের ছাপ একটু আগে দেখা যেতে পারে। এছাড়া যারা নিয়মিত ধূমপান বা মদ্যপান করেন তাদের চেহারায় অকালে বলিরেখা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

  • ত্বকে রোজ সানস্ক্রিন (sunscreen) লাগিয়ে সূর্যের ইউভিএ ও ইউভিবি (UVA and UVB) রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখুন।
  • শুষ্কতা প্রতিরোধ করতে বেশি করে জলপান করুন ও ত্বকে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার (moisturiser) লাগান।
  • অকালবার্ধক্য রোধ করতে ধূমপান ছেড়ে দিন ও মদ্যপানের মাত্রা কমান।
  • একটি সুস্থ ব্যালান্সড ডায়েট (balanced diet) খান যাতে প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট (nutrient) থাকে, যেমন ভিটামিন এ যা ত্বককে সেরে ওঠায় সাহায্য করে, ভিটামিন ই যা ত্বককে সুস্থ রাখে ও ভিটামিন সি যা বয়সের ছোপ আসা প্রতিরোধ করে।

ত্বকের অকালবার্ধক্যের চিকিৎসা

  • ফ্র্যাকশনাল মাইক্রোনিডলিং রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (Fractional microneedling radiofrequency)
  • কেমিক্যাল পিল (chemical peel)
  • বটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন (botulinum toxin injection) ও হায়ালুরনিক অ্যাসিড ফিলার (hyaluronic acid fillers)
  • লেজার টোনিং (laser toning)
  • লেজার রিসারফেসিং (laser resurfacing)

প্রাথমিক অ্যান্টি-এজিং চিকিৎসাপদ্ধতিগুলির লক্ষ্য হচ্ছে বয়সের উপসর্গগুলি, যেমন ত্বকে রঙের অসামঞ্জস্য, বয়সের ছোপ, সূক্ষ্ম লাইন, ভাঁজ পড়া, গর্ত বা অগভীর বলিরেখা দূর করা। গভীর বলিরেখা, ভাঁজ বা গর্তের জন্য আপনার চর্মবিশেষজ্ঞ আরো উন্নত পদ্ধতির পরামর্শ দিতে পারেন, যেমন হায়ালুরনিক অ্যাসিড ফিলার। এই সব চিকিৎসা প্রক্রিয়াগুলি ত্বকে বয়সের বিভিন্ন লক্ষণ দূর করতে এবং যৌবনদীপ্ত ত্বক পেতে সাহায্য করে।

আপনি যদি অকালবার্ধক্যের লক্ষণে ভোগেন, তবে অবিলম্বে চর্মবিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন। আপনার নিকটবর্তী অলিভা স্কিন এবং হেয়ার ক্লিনিকে শহরের শ্রেষ্ঠ চর্মবিশারদদেরকে দেখাতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট (appointment) বুক (book) করুন।

    Talk to Our Experts